এবিএনএ : রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন হলো শেষ ১০ দিন। কেননা এ দশকেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর। বিশেষ হেকমতের কারণে শবেকদরের দিনক্ষণ ঠিক করে দেওয়া হয়নি। এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। শবেকদর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জান, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)।
আরবি লাইলাতুল কদরের ফারসি হলো শবেকদর। বাংলায় ভাগ্যরজনী। এটি শ্রেষ্ঠতম রাত। এ রাতের ইবাদতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবেকদরে ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬০; বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
যারা এ রাতের রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত, তারা সবচেয়ে হতভাগা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এমন একটি মাস পেয়েছ, যার মধ্যে এমন একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এই পুণ্যময় রাতে বঞ্চিত থাকে, সে সমূহ কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত থাকে। সে খুবই হতভাগা, যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। (মিশকাত, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা-১৭৩; ইবনে মাজাহ : দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২০)
সুতরাং এই রাতের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা যায়, তবু সারা রাত নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। এক হাদিসে এসেছে : ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
শবেকদর কবে? হাদিস শরিফে এসেছে : ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭) নির্দিষ্টভাবে ২৭ রমজানের রাতকে শবেকদর বলা উচিত নয়। কেননা হাদিস শরিফে শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। কোনো কোনো হাদিসে রমজানের শেষ সাত দিনের কথাও এসেছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, কয়েকজন সাহাবি রমজানের শেষ সাত রাতে স্বপ্ন মারফত শবেকদর হতে দেখেছেন। সাহাবিদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাতে। সুতরাং কেউ চাইলে রমজানের শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পার।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মূল কথা হলো, শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত করা চাই। বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। শবেকদরের একটি বিশেষ আমল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘এই দোয়া পড়বে—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী এবং আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।